এবিএনএ: তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবদের নিজেদের ওপরই কোনো আস্থা নাই। বিএনপি শুধুমাত্র ষড়যন্ত্রের পথেই হাঁটছে, আর পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে। দেশ-বিদেশে অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিদেশিদের হাতে পায়ে ধরে দেশে একটি বিশৃঙ্খলা তৈরি করা যায় কি না সেই চেষ্টায় তারা সর্বদা লিপ্ত আছে। তবে এগুলো করে কোনো লাভ হবে না।
বুধবার বিকালে চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন-এর এম এম আলী রোডের ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি এতদিন ইভিএমে ভোটে যাবে না বলার পর নির্বাচন কমিশন এখন প্রিন্ট ব্যালটে ভোট গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন, সেটাতেও তাদের আগ্রহ নেই বলেছেন মির্জা ফখরুল। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, নিজেদের ওপর আস্থা নেই বলেই বিএনপি জনগণ থেকে দূরে সরে গেছে, সেটা তারা জানে। যার কারণে বিএনপিকে নির্বাচন-ভীতিতে পেয়ে বসেছে। সেজন্য ছাপানো ব্যালটেও ‘না’ এবং ইভিএমেও ‘না’ বলছেন তারা।
ক্রমাগতভাবে নির্বাচন থেকে পালিয়ে গেলে এক সময় পুরো বিএনপি দলটাই জনগণের কাছ থেকে পালিয়ে যাবে।এরআগে তথ্যমন্ত্রী এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন-এর বিশেষ সমাবর্তনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলস এর চেয়ারম্যান প্রফেসর এন্ড্রে সেনকেন কে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা যদি একটু খতিয়ে দেখেন তাহলে দেখতে পাবেন, বিএনপি ২০০৮ সালের নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে অংশগ্রহণ করে মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছিল। ২০১৪ সালে নির্বাচন থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ডান-বাম, অতিডান-অতিবাম এবং তালেবানসহ সবাইকে নিয়ে ঐক্য করেছিল। ঐক্য করে তারা আসন পেয়েছিল মাত্র ছয়টি। পরে মহিলা আসনসহ হলো মোট সাতটি। সেজন্য তারা জানে এই নির্বাচনেও তাদের কোন সম্ভাবনা নাই। সেজন্যই নির্বাচন বা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর বিএনপি ও তাদের মিত্রদের কোনো আস্থা নাই।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন অনেকটা তাদের দাবি মেনে নিয়েই ইভিএম থেকে সরে প্রিন্ট ব্যালটে ভোট করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এখানে তো বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর দাবিটাই মেনে নেয়া হয়েছে বলে বলা যায়। সুতরাং এখন নির্বাচনের জন্য যদি তাদের দল গোছায় এবং নির্বাচনে আসে সেটি তাদের জন্যই মঙ্গল হবে।
এর আগে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন-এর বিশেষ সমাবর্তনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ তার নিজ শহরে এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পর বহু গ্র্যাজুয়েট এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তারা সমাজের অগ্রগতিতে এবং সমগ্র সমাজে নারীদের অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখে চলছেন।
তিনি বলেন, এটি দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আমাদের সরকার ১৪০ একর জমি বরাদ্দ করেছে। এটিই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যার প্রধান পৃষ্ঠপোষক বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ বিশ্ববিদ্যালয় বোর্ডের চেয়ারম্যান। এদেশে আর কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের কাছ থেকে এতো বেশি সাহায্য-সহযোগিতা পায়নি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চট্টগ্রামে একটি মেডিকেল স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য তারা সরকারের কাছে আরও জমি বরাদ্দের আবেদন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, গত ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে নারীদের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এখন দেশের প্রতিটি সেক্টরে নারীরা কাজ করছেন। এখন আমাদের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, পুলিশের এসপি, ডিসি আছেন নারী। মাত্র ১২ বছর আগেও একজন নারী ডিসি বা এসপি অথবা ইউএনও হবেন তা কল্পনাও করা যায়নি। এখন দেশে অনেক নারী ইউএনও মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। একজন রুবানা হককে দেখলে আপনি অনুমান করতে পারবেন কিভাবে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে। তিনি ৮০ শতাংশ রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্প মালিক সমিতি বিজিএমইএ’র নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নয়, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নও হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা শুধু শিক্ষিতই নয়, স্বনির্ভরও হয়ে ওঠে, সমাজে অবদান রাখার যোগ্যতা অর্জন করে। এশিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা অনেক দিক দিয়েই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক বেশি যোগ্য। আপনারা এখানকার শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা দিচ্ছেন।
বিশেষ সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন ইশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এর ডিন ডেভিট টেইলর বীনাকোনা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্টাতা ভাইস চ্যান্সেলর কামাল আহমেদ, বর্তমান ভিসি রুবানা হক, ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলস এর চেয়ারম্যান প্রফেসর এন্ড্রে সেনকেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. নেহাল আহমেদ প্রমুখ।